প্রত্যাশা
শুভদীপ মিত্র
বেশ ছিল ছেলেটি....
পরিবার ও বন্ধুত্বের স্বাভাবিক সংমিশ্রন
প্রাণোজ্জ্বল মনপ্রাণ
আবেশযুক্ত চোখের নির্ভোজাল প্রতিশ্রুতিতে
লেখালেখিই যেন তার বিচরণক্ষেত্র
দিশাহীনতাকে সঙ্গী করে গান কবিতাকেই
সে বানিয়েছিলো তার বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র..
সব তো ভালোই চলছিল
তুমি নীরব অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাক্ষী স্বরূপ
২২ মে ছেলেটি আত্মহত্যা করল।
অফিসাররা এলেন,
তথাকথিত তদন্তে নিজেদের গুনের বহিঃপ্রকাশ দেখালেন
এবং শেষমেষ প্রমান করেই ছাড়লেন,
" প্রেমাভিনয়ে ব্যর্থ তরুণ,
নিজেই করল নিজেকে খুন।।"
কিন্তু, পাশের বাড়ির বন্ধুর ডায়ারে লুকানো অভাগার,
কিছু লেখা কিন্তু বিপক্ষে
কথা বলেছে সবার।
লেখা সামান্যই,
তবে তথাকথিত তদন্তের বিপক্ষে দাঁড়াবার,
ক্ষমতা রাখে অবশ্যই।
সে লিখেছে,
" মাগো হয়তো হার মানলাম,
কিন্তু তোমায় জিতিয়ে দিয়ে গেলাম।
আরে সুরভী কাকিমা, লক্ষী কাকিমা
তোমায় হেয় করবার তিলমাত্র সুযোগও পাবে না।"
" কেমিস্ট্রির অধ্যাপক আজ পাবে না সুযোগ
তার অমোঘ অগ্নিবান ছোঁড়ার,
ভীরেমালা বা অশ্রু সমর্পণের প্রতিযোগিতায়,
সবার মত আজ,
তিনিও যে হবেন জেরবার।"
" শুনেছিলাম চেষ্টাকৃত ব্যক্তি জিতবেই,
চেষ্টাও তো করেছিলাম সেই মতই,
কিন্তু পারলাম কই,
হয়তো হারিয়ে দিল, সময়ের স্বল্পতাই।।"
" যাক সে কথা,
অশ্রুসিক্ত চোখে বিদায় বেলায়,
শেষ আবদার সামান্যই,
প্রিয় গানের কল আর
সময়নষ্টের কবিতা গুলোকেই
অন্তত চিরসঙ্গী হিসাবে জায়গা দিও
অভাগার সাথেই।"
" তবে আফশোষ একটাই,
" মান্না দে'র শেষ গানটি তোলা হলো না আর,
বহু চেষ্টা করেও তো, মন যুগিয়ে
চলতে পারলাম না সবার।।"
" মাগো", শেষবেলায়,
আর মিথ্যে নয়,
বুকফাটা চিৎকার করে বলছি
একপৃথিবী ভালোবাসি তোমায়,
না হোক, লেখাগুলি স্মৃতি হোক
আমার সাথেই আর কান্না নয়
পারলে হাসিমুখেই দিও চিরবিদায়..."
ডাইরি বন্ধ করতে করতে,
লেখকের প্রশ্ন একটাই,
প্রতিযোগিতায় দৌড়ানো,
শিল্পীস্বত্তায় কি সেই ভাবনা
আসবে কখন?
ফিজিক্স না হয় নাই হলো
গান আঁকড়ে ধরতো অন্তত
বাঁচবার চেষ্টা করেছিল,
চেষ্টা ও সময় এর ব্যবধানে হয়ত,
সবটাই সুন্দর হতো, সবাই ভালো থাকতো,
কিন্তু, চাপ যন্ত্রের সৌন্দর্যের প্রকাশে,
আমাদের অভাগাই না হয় ভেসে থাকুক,
প্রাণপ্রিয় তারায়, আকাশে, বাতাসে......
সত্য ঘটনা অবলম্বনে.....